শিশুদের খেতে না চাওয়ার ৯টি কারণ ও প্রতিকার।
শিশুদের খেতে না চাওয়ার ৯টি কারণ ও প্রতিকার।
আসলে খাবারে যে কোনো অনিয়মই শিশুর খেতে না চাওয়ার অন্যতম কারণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিভাবকরা না জেনেই এমন অনিয়ম করে থাকেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশুর চাহিদা পূরণে কিছু প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। কেউ কেউ শিশুকে বাইরে থেকে লোভনীয় খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে শিশুর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নষ্ট করেন। অনেক অভিভাবক খাবারের মাঝে বাচ্চাকে বিস্কুট, ফল, লজেঞ্জ, আইসক্রিম ইত্যাদি দেন। অনেকে আবার সময়মতো খাওয়ান- শিশুর ক্ষুধার্ত কি না সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে। শিশুর কান্না শুনে অনেকেই মনে করেন ক্ষুধার্ত। কিন্তু শিশুরা আরও অনেক কারণে কাঁদতে পারে। কেউ কেউ অস্থির হয়ে পড়েন কারণ তাদের সন্তান এক বেলায় ঠিকমতো না খেয়ে থাকে। সকাল ৭টায় পেট ভরে না খাওয়ায় তিনি সকাল ৮টায় আবার খাওয়ানোর জন্য জোর দেন। এসব অভ্যাস শিশুদের জন্য ক্ষতিকর।
আসুন জেনে নেওয়া যাক শিশুদের খেতে না চাওয়ার ৯টি কারণ ও প্রতিকার।
১.সম্পূর্ণ ক্ষুধার্ত:
সম্পূর্ণ ক্ষুধার্ত না থাকলে শিশুরা খেতে চায় না। এছাড়াও, তারা প্লেটে খাবার শেষ করতে পারে না। কারণ তারা একসাথে খাওয়ানো পছন্দ করে না।
২.যখন-তখন খাবার খাওয়ানো:
খাবার শিশুদের রুটিন অনুযায়ী খাওয়ানো ভালো। সময়মতো খাবার দেওয়ার কারণে তারা ক্ষুধার্ত হবে না। অনেক শিশু স্কুল থেকে ফিরে বিস্কুট, ফল বা ফলের জুস খায়। ঘণ্টাখানেক পর হয়তো লাঞ্চ টাইম। তখন সে ঠিকমতো খেতে চাইবে না, কারণ তার ক্ষুধা আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক শিশু সারাদিন পেট ভরা রাখার জন্য বিস্কুট, ফল, লজেঞ্জ, আইসক্রিম ইত্যাদি খায়। এর ফলে মূল খাবারের সময় কিছু খেতে না।
৩. খাবার খাওয়ানো নিয়ে জেদ করবেন না:
শিশুকে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। আপনি যদি তাকে একবার জোর করে খাওয়ান, আপনি যখনই তাকে খাওয়াতে চান সে ভয় পাবে। খাবারের প্রতি তার আগ্রহ কমে যাবে। এক পর্যায়ে সে খাবারের প্রতি ঘৃণা তৈরি করতে পারে।
৪.খাওয়ার সময় টিভি বা কার্টুন দেখবেন না:
যদি বাচ্চাদের টিভি বা কার্টুন দেখে খাওয়ানো হয়, তাহলে তারা অভ্যস্ত হয়ে যাবে। খুব বেশি টিভি দেখা শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। টিভি দেখার সময় খাওয়ানো শিশুর বদহজমের ঝুঁকি বাড়ায়। কারণ এ সময় টিভিতে মনোযোগের কারণে পেট থেকে প্রয়োজনীয় পরিপাক রস বের হয় না।
৫.খাবারের পরিবর্তন করুন:
প্রতিদিন একই খাবার না দিয়ে খাবারের পরিবর্তন করুন। যদি সে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে তবে সে কী খেতে চায় তা খুঁজে বের করুন। তাকে স্বাস্থ্যকর উপায়ে তার পছন্দের খাবার খেতে দিন। বাইরের খবরের বিপদ সম্পর্কে তাকে বলুন।
৬.বাইরের খাবার:
এমন নয় যে বাইরের খাবার একেবারেই দেবেন না। বড়দের সঙ্গে কোথাও পার্টিতে গেলে বা পুরো পরিবার নিয়ে কোথাও বেড়াতে গেলে নিশ্চয়ই বাইরের খাবার খেতে পারেন। তবে প্রতিদিন তার জন্য আলাদা করে বাড়ির খাবার আনবেন না বা বাইরে খেতে নিয়ে যাবেন না।
৭.খাবারের স্বাদ:
শিশুর প্রিয় খাবার রান্না করুন। শিশু খাবারের সঠিক স্বাদ অনুভব করতে সক্ষম হবে না। সে খাবার খেতে পারে না বলে সে খাবারের প্রতি এক ধরনের বিরক্তি তৈরি করবে।
৮.সময়মাফিক খেতে দিন:
বয়স অনুযায়ী শিশুর ক্ষুধার সময়ের কিছু পার্থক্য রয়েছে। আপনার শিশুকে নিয়মিত সময়সূচীতে খাওয়ার অভ্যাস করুন। আপনি কি খাওয়াচ্ছেন তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল আপনি কখন খাওয়াচ্ছেন। আপনার শিশুকে ঘন্টার পর ঘন্টা খাওয়াবেন না কারণ সে খেতে চায় না বা খাবে না। শিশু যদি একেবারেই খেতে না চায়, প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। মাঝে মাঝে খাবার দিয়ে তার ক্ষুধা নষ্ট করবেন না।
৯.খাবার বিরতি:
সাধারণত: দুই থেকে তিন বছর বয়সীদের প্রতিবেলা খাবারের মধ্যে দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিরতি থাকা উচিত। এই ব্যবধানে অন্য কোনো খাবার না খেলে সে যথাসময়ে ক্ষুধার্ত হওয়ার কথা। তিন থেকে চার বছর বয়সী বাচ্চাদের তিন থেকে চার ঘণ্টার ব্যবধানে খাওয়াতে হবে। এইভাবে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে, কিশোর বয়স পর্যন্ত প্রতিবেলা খাবারের মধ্যে ব্যবধান কিছুটা বাড়বে। এরপর বড়দের সঙ্গে তিনবেলা খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত ডা. মানিককুমার তালুকদার-রচিত প্রবন্ধের ছায়া অবলম্বনে লিখিত।
পোস্টের নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ‘‘Facebook Page” লাইক দিয়ে রাখুন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে নিচের ফেসবুক, টুইটার বা গুগল প্লাসে
শেয়ার করে আপনার টাইমলাইনে রেখে দিন। এতক্ষণ সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
No comments