কৈশোরকালীন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও সমাধান।
কৈশোরকালীন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও সমাধান। আজকের এ পোস্ট থেকে আমরা জানবো-মানসিক স্বাস্থ্য বলতে কি বুঝায়? মনোসামাজিক সহায়তা কি?
কৈশোরকালীন মনোসামাজিক পরিবর্তন কি? মনোসামাজিক পরিবর্তনসমূহ কি ধরনের? আবেগ কি? কি কি ধরনের আবেগজনিত/আবেগীয় পরিবর্তন হতে পারে? কেন আবেগ ব্যবস্থাপনা করা গুরূত্বপূর্ণ? আবেগ ব্যবস্থাপনার জন্য কি ধরনের কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে? উদ্বেগ কি? উদ্বেগের মানসিক লক্ষণ ও উপসর্গ কি হতে পারে? উদ্বেগের শারীরিক লক্ষণ ও উপসর্গ কি হতে পারে?
চলুন তাহলে শুরু করা যাক-
প্রশ্ন: মানসিক স্বাস্থ্য বলতে কি বুঝায়?
উত্তর: মানসিক স্বাস্থ্য হল এমন একটি অবস্থা যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের সম্ভাবনাকে উপলব্ধি করতে পারে, জীবনের দৈনন্দিন চাপকে মোকাবেলা করতে পারে, উৎপাদনশীলভাবে কাজ করতে পারে এবং তার সমাজে অবদান রাখতে সক্ষম হয়।
প্রশ্ন: মনোসামাজিক সহায়তা কি?
উত্তর: এটি এমন এক ধরণের সেবা যার দ্বারা মানুষ আত্মসচেতন হওয়ার মাধ্যমে নিজের আচরণ ও মনোভাবের কাঙ্খিত পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়।
প্রশ্ন: কৈশোরকালীন মনোসামাজিক পরিবর্তন কি?
উত্তর: কৈশোরকালীন সময়ে কিশোর-কিশোরীদের মাঝে বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। পরিবার, বন্ধু এবং সমবয়সীদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও নানা ধরণের ভিন্নতা প্রকাশ পায়। কারণ, প্রত্যেক কিশোর- কিশোরীর মনোসামাজিক বিকাশ ভিন্ন, এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে জিনগত বৈশিষ্ট্য, মস্তিষ্কের বিকাশ, অভিজ্ঞতা ছাড়াও চারপাশের পরিবেশ (পরিবার, বন্ধু, সমাজ, কৃষ্টি) ইত্যাদিও বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। মনোসামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের মাঝে আত্ম-নির্ভরশীলতা এবং পরিণত বয়সের বৈশিষ্ট্যগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়।
প্রশ্ন: মনোসামাজিক পরিবর্তনসমূহ কি ধরনের?
উত্তর:
· ব্যক্তিগত পরিচয় অনুসন্ধান করা
· অধিক স্বাধীনচেতা মনোভাব
· অধিক দায়িত্ব অন্বেষণ করা
· ঝুঁকি-গ্রহণমূলক আচরণ
· সম্পর্কজনিত বিষয়
প্রশ্ন: আবেগ কি?
উত্তর: আবেগ হলো এক ধরনের মানসিক অবস্থা যা চিন্তন, অনুভূতি, আচরণগত প্রতিক্রিয়া এবং আনন্দ/বেদনার মাত্রার সাথে সম্পর্কিত। আবেগের ফলে আমাদের নানা রকম শারীরিক, আচরণগত এবং চিন্তার পরিবর্তন হয়।
প্রশ্ন: মৌলিক আবেগগুলো কি, কি?
উত্তর:
· সুঃখ
· দুঃখ
· রাগ
· ভয়
প্রশ্ন: কি কি ধরনের আবেগজনিত/আবেগীয় পরিবর্তন হতে পারে?
উ
উউত্তর:
· -আত্ম সম্মানবোধ
· -আবেগীয় সমস্যা (অত্যধিক রাগ, নিরাপত্তাহীনতা, উদ্বেগ, চাপ, হতাশা, বিষন্নতা)
· - প্রত্যাহার মূলক মনোভাব
· - বিদ্রোহী আচরণ
Photo Credit: Shutterstock |
প্রশ্ন: কেন আবেগ ব্যবস্থাপনা করা গুরূত্বপূর্ণ?
উত্তর: দৈনন্দিন জীবনে আমাদের অনেক নেতিবাচক ঘটনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। ফলে আমরা নানা ধরনের আবেগীয় সংকটের সম্মূখীন হই, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কি করতে হবে, কিভাবে করতে হবে তা নিয়ে আমরা অনিশ্চয়তা ও দ্বিধায় ভূগি। আবেগ ব্যবস্থাপনা ব্যক্তিকে আত্ম নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করবে, নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে এবং এ ধরনের পরিস্থিতিতে কিভাবে প্রতিক্রিয়া করতে হবে তাতে সহায়তা করবে। ব্যক্তি তার গুনাবলীগুলো উপলদ্ধি করতে পারবে এবং ফলপ্রসূভাবে কাজ করতে পারবে। আত্ম-বিশ্বাস, আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা এবং আত্মসম্মানবোধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
প্রশ্ন: আবেগ ব্যবস্থাপনার জন্য কি ধরনের কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে?
উত্তর:
· -নিজের অনুভূতি, প্রতিক্রিয়া এবং মানসিক অবস্থার প্রতি খেয়াল করা এবং বোঝা
· -নিজের অনুভূতি ও আচরণের দায়িত্ব নেওয়া
· - নিজের সফলতার উপর ফোকাস করা এবং এর জন্য নিজেকে প্রশংসা করা
· -প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় অতিবাহিত করা
· -মুক্ত মনা হওয়া ও চারপাশে যা ঘটছে তা গ্রহণ করা
· -বিশ্বস্ত কারো সাথে মনের কথা শেয়ার করা
· -পছন্দনীয় ইতিবাচক কাজ করা (পছন্দের বই পড়া, গান শোনা)
· -ডায়েরী লেখা (ঘটে যাওয়া ঘটনা, নিজের চিন্তা ও অনুভূতি লেখা)
· -জীবনের ইতিবাচক ঘটনার প্রতি ফোকাস করা
· - ব্যায়াম করা
· - নাক দিয়ে গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে প্রশ্বাস ছাড়
প্রশ্ন: উদ্বেগ কি?
উত্তর: আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (APA) এর মতে, “উদ্বেগ হলো এক ধরনের আবেগ যাকে তীব্র অনুভূতি, দুঃশ্চিন্তা এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি করার মতো শারীরিক পরিবর্তনগুলো দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।” স্বাভাবিক মাত্রায় উদ্বেগের অনুভূতি থাকা ভালো, যেটা ব্যক্তিকে কোন বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত ও সহায়তা করে। তবে উদ্বেগ বেশি মাত্রায় থাকলে ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর হয় ফলে ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবন যাত্রার মান ব্যহত হয় এবং ব্যক্তির মানসিক অবস্থা হুমকির সম্মুখীন হয়।
প্রশ্ন: উদ্বেগের মানসিক লক্ষণ ও উপসর্গ কি হতে পারে?
উত্তর:
· -অত্যধিক রাগ
· -বিরক্ত বোধ
· - মনোযোগের অসুবিধা
· - অস্থিরতা
· - যেকোন পরিস্থিতি খুব বিপজ্জনক মনে করা
· -খারাপ কিছু ঘটবে বলে আশংকা
· - নেতিবাচক চিন্তা
প্রশ্ন: উদ্বেগের শারীরিক লক্ষণ ও উপসর্গ কি হতে পারে?
উত্তর:
· -হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
· -রক্ত চাপ বেড়ে যাওয়া
· -বমি বমি ভাব
· -ঘাম হওয়া
· -মুখ শুকিয়ে যাওয়া
· -ডায়রিয়া
· -পেট ব্যাথা, মাথা ব্যাথা
· - শ্বাস কষ্ট
প্রশ্ন: উদ্বেগের আচরণগত লক্ষণ ও উপসর্গ কি হতে পারে?
উত্তর:
· -শ্বাস কষ্ট
· -ঘুম না হওয়া বা ঘুমের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
· - পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা
· -খাবারে অরুচি বা অত্যধিক পরিমাণে খাবার গ্রহণ করা
· -অলসতা বা অনীহা
· -মাদক দ্রব্য গ্রহণ করা/মদ্যপান করা
· -প্রত্যাহারমূলক আচরণ
প্রশ্ন: মানসিক উদ্বেগের কারণ কি?
· -চাহিদা ও যোগানের মধ্যে পার্থক্য থাকা
· -অবাস্তব প্রত্যাশা
· -আত্ম নিয়ন্ত্রণের অভাব
· -প্রত্যাখ্যাত ও বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়
· -তুলনা করা
· -কর্মক্ষেত্র ও স্কুলের কাজের চাপ
· -ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি
· -অর্থনৈতিক সমস্যা
· -অসুস্থতা
· -নেতিবাচক অভিজ্ঞতা ইত্যাদি
প্রশ্ন: মানসিক উদ্বেগ থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু উপায় কি হতে পারে?
উত্তর:
১) নিজের চিন্তা, অনুভূতি ও আচরণের প্রতি খেয়াল করা এবং এগুলোর দায়িত্ব গ্রহণ করা
২) বিশ্বস্ত কারো সাথে মনের কথা শেয়ার করা
৩) নিজেকে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে রাখা যেমন- ১০-১৫ মিনিট হাঁটা, এক কাপ চা তৈরি করে খাওয়া, গোসল করা ইত্যাদি
৪) নিজের সাথে ইতিবাচক কথা বলা
৫) যে পরিস্থিতি বা ঘটনা আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে তা মেনে নেওয়া
৬) পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো
৭) নিজের পছন্দের ইতিবাচক কাজ করা
৮) পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
৯) ভালো স্মৃতি বা সফলতার কথা ভাবা
১০) নিজেকে পুরস্কৃত করা ও নিজের প্রশংসা করা
১১) দৃঢ়তার সাথে “না” বলতে শেখা
১২) ব্যায়াম করা
১৩) নাক দিয়ে গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে প্রশ্বাস ছাড়া
১৪) প্রয়োজনে মনোবিজ্ঞানীর শরণাপন্ন হওয়া
প্রশ্ন: মানসিক চাপ কি?
উত্তর: ব্যক্তির চাহিদা এবং ক্ষমতার মধ্যে দ¦›দ্ব তৈরি হওয়ার ফলে ব্যক্তির নিজের মধ্যে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাকে মানসিক চাপ বলা হয়। অর্থাৎ আমরা যে কাজটি যেভাবে করতে চাই তা যখন পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে করতে পারি না তখন আমরা মানসিকভাবে চাপ অনুভব করে থাকি।
প্রশ্ন: মানসিক চাপের ফলে সৃষ্ট পরিবর্তনসমূহ কি হতে পারে?
উত্তর: মানসিক চাপের ফলে শারীরিক, আবেগীয়, আচরণগত বিভিন্ন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়।
Photo Credit: Shutterstock |
প্রশ্ন: মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু উপায় কি?
উত্তর:
· - বাইরে হাঁটতে যাওয়া
· -বিশ্বস্ত বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে সুন্দর সময় অতিবাহিত করা
· - বিশ্বস্ত কারো সাথে মনের কথা শেয়ার করা
· -পছন্দের বই পড়া, গান শোনা
· -ডায়েরী লেখা
· -ব্যায়াম করা
· -আয়নায় নিজেকে দেখা
· -হাত-মুখ ধৌত করা বা গোসল করা
· -প্রার্থনা করা
· -পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো
· -প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় অতিবাহিত করা
· -নাক দিয়ে গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে প্রশ্বাস ছাড়া
আরও দেখুন-
যে ঔষধে মানসিক চাপ কমায়।
প্রশ্ন: রাগ কি?
উত্তর: রাগ হচ্ছে এক ধরনের মৌলিক অনুভূতি যার উৎপত্তি ঘটে কষ্ট, হতাশা,বিরক্তি, আশাহত হওয়া ইত্যাদি থেকে। রাগ প্রকাশের মাত্রা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সামান্য বিরক্তি প্রকাশমূলক শব্দ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কার্যাবলী সম্পাদনের মাধ্যমে রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে।
রাগ আমাদের স্বাভাবিক আবেগ। সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করলে এই আবেগ ক্ষতিকর নয়।
প্রশ্ন: আমরা কি কারণে এবং কখন খুব সহজেই রেগে যাই?
উত্তর:
· -Passive behavior pattern বা নিষ্ক্রিয় আচরণের ফলে
· -সামাজিক সমর্থনের অভাব
· -আবেগীয় বিশৃঙ্খলা- বিষন্নতা, উদ্বেগ ইত্যাদি
· -মানসিক আঘাতজনিত ঘটনা
· -মানসিক চাপ
· -আঘাত/ অপমান করে কথা বললে
· -হুমকির সম্মুখীন হলে
· -নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে বাধাগ্রস্ত হয়ে হতাশ হওয়ার ফলে
· -অসম্মানিত হওয়ার ফলে
· -অধিকার খর্ব হলে ইত্যাদি
প্রশ্ন: রাগের ফলে আমাদের কি কি ক্ষতি হয়?
উত্তর:
· -শারীরিক ক্ষতি
· -মানসিক ক্ষতি
· -Career বা পেশাগত ক্ষতি
· -পড়ালেখার ক্ষতি
· -সম্পর্কের ক্ষতি
· -বিষন্নতায় ভোগা
· -ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তা করা
· -ঘুমের সমস্যা
· - নেশায় জড়িয়ে পরা
· -একই কাজ বারবার করার প্রবনতা
· -Self-harm বা নিজের ক্ষতি করা
· -রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি
প্রশ্ন: রাগ ব্যবস্থাপনার কৌশল কি হতে পারে?
উত্তর:
১) প্রতিক্রিয়া প্রকাশের আগে কিছুটা সময় নেয়া
২) ১-১০ পর্যন্ত ধীরে ধীরে গুণতে থাকা
৩) Assertive ভাবে কথা বলা( কোন প্রকার ক্ষতিকারক আচরণ এবং অন্যকে অসম্মানজনক আচরণ প্রদর্শন না করে নিজের চিন্তা ও অনুভূতিকে নানাভাবে প্রকাশ করা)
৪) পর্যাপ্ত ঘুম
৫) ডায়েরী লেখা
৬) শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করা
৭) নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করা
৮) পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়া
৯) মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া
সূত্র: adoinfo.dgfp.gov.bd/bn/faq
পোস্টের নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ‘‘Facebook Page” লাইক দিয়ে রাখুন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে নিচের ফেসবুক, টুইটার বা গুগল প্লাসে
শেয়ার করে আপনার টাইমলাইনে রেখে দিন। এতক্ষণ সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
No comments